মীর দুলাল বিশেষ প্রতিবেদন! সূত্র : বাংলাদেশে সংবাদ সংস্থা!
অসহযোগ আন্দোলনে আজ রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকা। ছবি : ফোকাস বাংলা
দেশব্যাপী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অসহযোগ কর্মসূচিতে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ১৮ জেলায় ৮৩ জন নিহত হয়েছে। তাদের মধ্যে ঢাকায় পাঁচ, নরসিংদীতে ছয়জন, ফেণীতে আটজন, সিরাজগঞ্জে বাইশজন, মুন্সিগঞ্জে তিনজন, বগুড়ায় পাঁচজন, মাগুরায় চারজন, ভোলায় তিনজন, রংপুরে চারজন, পাবনায় তিনজন, কুমিল্লায় তিনজন, বরিশালে একজন, সিলেটে চারজন, জয়পুরহাটে একজন, কিশোরগঞ্জে চারজন, লক্ষ্মীপুরে চারজন, শেরপুরে দুজন, হবিগঞ্জে একজন রয়েছেন।
ঢাকায় নিহত ৫, গুলিবিদ্ধ ১১১ জন ঢামেকে
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ চলছে। এসব ঘটনায় এখন পর্যন্ত পাঁচজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে একজন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য আনোয়ারুল ইসলাম। তিনি উত্তরার রাজলক্ষ্মী এলাকার লতিফ এম্পোরিয়াম মার্কেট সংলগ্ন এলাকায় মারা যান। তার মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের ৫৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর হোসেন। তিনি বলেন, আনোয়ারুল ইসলাম উত্তরা এলাকায় আওয়ামী লীগের অবস্থান কর্মসূচি ছিলেন। এদিকে কেরানীগঞ্জে একজন মারা গেছেন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্র জানায়, আজ বিকেল ৩টা পর্যন্ত রাজধানীর শাহবাগ, শনির আখড়া, নয়াবাজার, ধানমণ্ডি, সায়েন্স ল্যাবরেটরি, পল্টন, প্রেসক্লাব এবং মুন্সীগঞ্জ থেকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ১১১ জনকে এখানে আনা হয়। এর মধ্যে ৩৩ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
দুপুরে রাজধানীর জিগাতলা এলাকায় সংঘর্ষের মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়ে আব্দুল্লাহ সিদ্দিকী (২৩) নামে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। তিনি রাজধানীর হাবিবুল্লাহ বাহার ডিগ্রি কলেজে পড়ালেখা করতেন। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় বিকেল পৌনে ৪টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিলে চিকিৎসকেরা জানান, তাকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। তার বাবার নাম আবু বকর বলে জহির ইসলাম নামে একজন গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন।
বিকেলে ফার্মগেট এলাকায় সংঘর্ষের মধ্যে আহত হয়ে তৌহিদুল ইসলাম (২২) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। তিনি মহাখালীর ডিএইট কনসালটেন্ট লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানের অফিস সহকারী। আ
আহত তৌহিদুলকে বিকেল সোয়া ৫টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হলে চিকিৎসকেরা তার মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেন। তারা আরও জানান, তৌহিদুলের মাথায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছেন।
নরসিংদীতে সংঘর্ষে নিহত ৬
জেলার মাধবদীতে সংঘর্ষে ছয়জনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
আজ রোববার (৪ আগস্ট) দুপুর দুইটার দিকে মাধবদী বাজার বড় মসজিদ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহতদের মধ্যে তিন জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন—চরদীঘলদি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন শাহীন, সদর উপজেলা পরিষদের সদস্য দেলোয়ার ও আওয়ামী লীগ নেতা মনির। বাকি তিনজনের নাম-পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া যায়নি। নরসিংদী সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন তথ্য গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।
ফেনীতে আটজন নিহত
ফেনীতে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের সংঘর্ষে আটজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আজ বেলা ২টার দিকে সংঘর্ষ শুরু হয়। সকাল থেকে বিক্ষোভকারীরা অসহযোগের সমর্থনে মহিপাল এলাকায় বিক্ষোভ করছিলেন। দুপুর ২টার দিকে মহিপাল সেতুর নিচে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের কর্মীরা মিছিল নিয়ে এলে সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় মুহুর্মুহু গুলি, ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। সংঘর্ষে নিহতদের নামপরিচয় জানা যায়নি। এ ছাড়া তিন গণমাধ্যমকর্মীসহ অন্তত ১০জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
হবিগঞ্জ শিক্ষার্থী, আওয়ামী লীগ পুলিশের সংঘর্ষে রিপন শীল (২৭) পিতা রতন শীল অনন্তপুর হবিগঞ্জ পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছে!
বিষয় টি নিশ্চিত করেন- হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালের চিকিৎসক ড: আবু নাঈম!
লক্ষ্মীপুরে সংঘর্ষ, গুলি : নিহত ৪
লক্ষ্মীপুরে সংঘর্ষ ও গোলাগুলিতে চারজনের মৃত্যু হয়েছে।
এরমধ্যে তিনজনের মরদেহ সদর হাসপাতালের মর্গে রয়েছে। অন্যজনকে ঢাকায় নেওয়ার পথে মারা যায়। সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) অরূপ পাল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নিহতরা হলেন—আফনান পাটওয়ারী, কাউছার, সাব্বির ও মিরাজ। এরমধ্যে আহত অবস্থায় ঢাকা নেওয়ার পথে আফনান মারা যান।
আরএমও অরুপ পাল বলেন, অর্ধশতাধিক আহত রোগীকে হাসপাতাল আনা হয়েছে। এরমধ্যে তিনজনকে মৃত পেয়েছি। তারা গুলিবিদ্ধ। এ ছাড়া দুপুরে আহত অবস্থায় দুজনকে ঢাকায় পাঠানো হয়।
ঢাকায় নেওয়ার পথে একজন মারা যায়। আহতদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
সিরাজগঞ্জ ২২ জন নিহত
রায়গঞ্জ উপজেলায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে স্বেচ্ছাসেবক লীগনেতা, ইউপি চেয়ারম্যানসহ ছয়জন নিহত হয়েছেন। এ সময় উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় ও কয়েকটি মোটরসাইকেলে আগুন জ্বলতে দেখা যায়।
সংঘর্ষে আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক মানুষ। এক তথ্য বলছে, এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
এদিকে, এনায়েতপুর থানায় হামলার ঘটনায় ১৩ পুলিশ সদস্য মারা গেছেন।
সংঘর্ষে চারজনের মৃত্যুর তথ্য আজ বেলা সাড়ে ৩টায় এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আমিমুল ইহসান। আমিমুল ইহসান বলেন, গুরুতর আহত অবস্থায় আওয়ামী লীগের ১৫থেকে ২০ জন নেতাকর্মীকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় চারজন মারা গেছেন। মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আল আমিন সরকারের মরদেহ পরিবারের লোকজন নিয়ে গেছেন। অন্য তিনজন হলেন—উপজেলার ব্রহ্মগাছা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম ছরওয়ার, আলম ও প্রদীপ কুমার।
এরপর আরও পাঁচজনের তথ্য পাওয়া গেলেও নামপরিচয় জানা যায়নি।
আর রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি কার্যালায় নিশ্চিত করেছে, সেখানে এনায়পুর থানায় হামলার ঘটনায় ১৩ পুলিশ নিহত হয়েছেন। যদিও সিরাজগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) হান্নান মিয়া এনটিভি অনলাইনকে বলেন, এনায়েতপুর থানায় আগুনের ঘটনা ঘটেছে। থানা থেকে ১২ পুলিশ সদস্যের মরদেহ উদ্ধার হয়েছে। তবে, এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
মুন্সীগঞ্জে ত্রিমুখী সংঘর্ষে নিহত ৩
আজ সকালে পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী মুন্সীগঞ্জ শহরের সুপার মার্কেট ও কৃষি ব্যাংক মোড় এলাকায় জড়ো হতে থাকেন আন্দোলনকারীরা। পরে সকাল ১০টার দিকে পুলিশ, আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ বাঁধে। এতে সুপার মার্কেট থেকে কৃষি ব্যাংক এলাকাজুড়ে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এ সময় কাজে যাওয়ার পথে দুজন নির্মাণ শ্রমিক গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। এ ছাড়া আরও একজনের মৃত্যুর তথ্য মিলেছে।
এই ত্রিমুখী সংঘর্ষে সাতজন গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছে।