তারিকুল ইসলাম আলভী
রমজান শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই খুলনার বাজারে বোতলজাত ভোজ্যতেলের সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। দোকানদারদের অভিযোগ, ডিলারদের কাছ থেকে তেল সংগ্রহ করতে গেলে তাদের সঙ্গে লবণ, আটা বা পোলাও চাল কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে। ফলে খুচরা বিক্রেতারা তেলের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন, যা সাধারণ ভোক্তাদের ভোগান্তিতে ফেলেছে।
নগরীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ১ লিটার বোতলের গায়ে ১৭৫ টাকা লেখা থাকলেও সেটি ১৮০ থেকে ১৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে শুধু দাম বৃদ্ধিই নয়, বাজারে ২ ও ৫ লিটারের বোতলজাত তেল পাওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। ক্রেতারা এক দোকান থেকে আরেক দোকানে ঘুরেও কাঙ্ক্ষিত পণ্য পাচ্ছেন না।
বড় বাজারের ব্যবসায়ী আবুল হাসেম স্টোর থেকে তেল কিনতে এসে বিপাকে পড়েন রূপসা উপজেলার লিটন। তিনি বলেন, “১৫ মিনিট ধরে ঘুরে ২ লিটার বা ৫ লিটার বোতলজাত তেল কোথাও পেলাম না। অবশেষে ১ লিটার তেল পেলেও দোকানদার সেটি ১৮৫ টাকায় বিক্রি করতে চান, অথচ বোতলে লেখা দাম ১৭৫ টাকা।”
দোকান মালিকদের দাবি, তারা বাধ্য হয়েই বেশি দামে বিক্রি করছেন। এক ব্যবসায়ী জানান, “ডিলারদের কাছ থেকে তেল কিনতে হলে আমাদের ১০০ কেজি লবণ ও ৩ বস্তা আটা নিতে হচ্ছে। এতে আমাদের অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে, যা পোষাতে ৫-১০ টাকা বেশি দরে তেল বিক্রি করতে হচ্ছে।”
মিস্ত্রিপাড়া বাজারের সুমি স্টোরের মালিক আরাফাত জানান, গত এক মাস ধরে তিনি কোনো বোতলজাত তেল পাননি। তীর, ফ্রেশ, বসুন্ধরার মতো জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের তেল বাজার থেকে উধাও হয়ে গেছে। তিনি বলেন, “কোম্পানি থেকে তেল কিনতে গেলে আমাদের সঙ্গে লবণ, আটা বা পোলাওর চাল কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে। এসব না নিলে ডিলাররা তেল দিচ্ছেন না।”
তিনি আরও বলেন, “বড় বাজারে বোতলজাত তেল কিনতে গেলেও গায়ে লেখা মূল্যের চেয়ে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। ফলে আমাদেরও বাধ্য হয়ে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।”
অপরদিকে, খোলা বা লুস তেলের কোনো সংকট নেই, তবে তার দামও অনেক বেশি। বাজারে লুস তেল প্রতি লিটার ১৯২-১৯৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতারা অভিযোগ করছেন, ব্যবসায়ীরা বোতলজাত তেল ড্রামে ভরে খোলা তেল হিসেবে বেশি দামে বিক্রি করছেন।
ক্রেতা ফিরোজুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “বিশ্বের অন্যান্য দেশে রমজানে নিত্যপণ্যের দাম কমে, কিন্তু আমাদের দেশে উল্টো চিত্র দেখা যায়। ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে অতিরিক্ত মুনাফা অর্জনের চেষ্টা করেন।”
তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বাজার তদারকি বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে বলেন, “রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখতে কঠোর নজরদারি প্রয়োজন। না হলে সংকট আরও প্রকট হবে, যা সাধারণ মানুষের জন্য বড় ভোগান্তি বয়ে আনবে।”