দিরাইয়ে কিশোরী ও শাল্লায় ছাত্রী ধর্ষণের চেষ্টা
দিরাই সংবাদদাতা:গোলাম জিলানী
সুনামগঞ্জের দিরাই ও শাল্লায় এক কিশোরী ও এক স্কুল ছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টার ঘটনা ঘটেছে। দিরাইয়ে ঘটনায় পুলিশ দুজনকে আটক করলেও শাল্লা ঘটনাটি গ্রাম্য সালিসি বৈঠকে মীমাংসার নামে ধামাচাপা দিতে তৎপর । বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা বেলা পৃথক দুটি ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।পুলিশ ও স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, দিরাই উপজেলায় অটোরিকশায় তুলে ভুল পথে নিয়ে এক কিশোরীকে (১৬) ধর্ষণের চেষ্টা করে যাত্রীবেশি তিনজন। পরে মেয়েটি লাফ দিয়ে অটোরিকশা থেকে রাস্তায় নেমে নিজেকে রক্ষা করে। আহত মেয়েটি বর্তমানে সুনামগঞ্জ জেলা সদর হাসাপাতলে ভর্তি আছে। তাঁর ডান চোখ, কপাল, গাল, হাত থেঁতলে গেছে।সুনামগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, মেয়েটির মুখের ডান পাশ থেঁতলে আছে। ডান চোখের চারপাশ ফুলে বন্ধ হয়ে গেছে চোখ। ভিকটিমের বরাত দিয়ে হাসপাতালের দায়িত্বরত এক সেবিকা বলেছেন, আলামতে বুঝা যায় তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে।কিশোরী জানায়, বৃহস্পতিবার দুপুরে কিছু কাপড়চোপড় কেনার জন্য তারা তিনজন দিরাই পৌর শহরে আসে। অন্য দুইজনের কেনাকাটা শেষ হওয়ায় তারা আগেই চলে যায়। বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে মেয়েটি কেনাকাটা শেষে বাড়িতে যাওয়ার জন্য দিরাই বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে সেখানে দাঁড়ানো একটি অটোরিকশায় ওঠে। সেখানে তখন মানুষের ভিড় বেশি ছিল। এ সময় আরও দুই যুবক দুই দিকে ওঠে পড়ে। এরপরই চালক অটোরিকশা চালিয়ে দেয়। কিছুদূর যাওয়ার পরই মেয়েটি দেখতে পায় অটো সুনামগঞ্জ শহরের দিকে যাচ্ছে। তখনই অটোরিকশা থামাতে বলে চালককে। এই কথা বলার পরই পাশে থাকা দুইজন তাকে জাপটে মুখ চেপে ধরে। মুঠোফোন কেড়ে নেয়। তখন মেয়েটি তাদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি শুরু করে। এভাবে ধস্তাধস্তির এক পর্যায় অটোরিকশা দিরাই মদনপুর সড়কের গণিগঞ্জ এলাকায় আসে। এই সময় জোরে ধাক্কা দিয়ে নিজেকে কোনো রকমে ছাড়িয়ে মেয়েটি চলন্ত অটোরিকশা থেকে লাফ দিয়ে রাস্তায় পড়ে যায়।মেয়েটির বাবা জানান, রাত নয়টার দিকে তার এক আত্মীয় ঢাকা থেকে ফোন করে জানান, তার মেয়েকে দিরাই মদনপুর সড়কের গণিগঞ্জ এলাকায় আহত অবস্থায় সড়কের পাশে পাওয়া গেছে। সেখানে একজনের বাড়িতে রাখা হয়েছে। এরপর তারা গিয়ে মেয়েকে সুনামগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। রাত ১১টায়, হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মেয়েটি সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে। বাবা একজন কৃষক।দিরাই থানার ওসি আবদুর রাজ্জাক বলেন, শুক্রবার বিকালে সুনামগঞ্জ শহর থেকে একজন শিক্ষক ফোনে আমাকে বিষয়টি জানিয়েছেন। আমরা মেয়েটির বাড়িতে পুলিশ পাঠিয়েছি। এঘটনায় দুইজনকে আটক করা হয়েছে। সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালেও এখনই ডিবি পুলিশ পাঠানো হবে। কিছুক্ষণ পর দিরাই থানা থেকে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে পুলিশ যাবে আমরা গুরত্বের সঙ্গে দেখছি।
এদিকে শাল্লায় ৫ম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে ধর্ষণচেষ্টার খবর পাওয়া গেছে । গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ভুক্তভোগীর বাড়ির আঙ্গিনায় কাজ করার সময় এ ঘটনাটি ঘটেছে।ধর্ষণ চেষ্টাকারী একই গ্রামের সুদর্শন দাসের ছেলে মানিক লাল দাস (৩০)। তবে ঘটনাটির পর পরই ধামাচাপা দেওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেন সেখানকার স্থানীয় মাতাব্বরেরা।গ্রামের মাতাব্বর রণজিৎ সরকার, বকুল দাস, বিকাশ দাস, সচিন্দ দাস, রানু দাস, কৃষ্ণপদ দাস, রাজ কুমার দাস, সোম চাঁদ দাস, সুনিল দাস, ইন্দ্রজিৎ দাস, সজল দাস, আশিষ দাস কেনু দাস বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন। ভুক্তভোগীর পরিবার ও স্থানীয়রা জানান, গ্রামের তিন পাড়ার মাতব্বররা জড়ো হয়ে ভবিষ্যতে এসব না করার জন্য অভিযুক্ত যুবককে বলে দেওয়া হয়। তবে গ্রামের মোড়ল মাতাব্বরদের এসব রায়ে সন্তোষজনক হয়ে ওঠেনি ভুক্তভোগীর পরিবার ও গ্রামের অধিকাংশ মানুষের। বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা স্বীকার করে গ্রামের রণজিৎ সরকার বলেন, দ্বিজেন্দ্র মেম্বারও বিচারে উপস্থিত ছিলেন। প্রথমে আমরা বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু গ্রামবাসী বসার পর অভিযুক্ত যুবককে পঞ্চায়েতের সামনে হাজির করা সম্ভব হয়নি। তিনি বলেন, অভিযুক্ত যুবক পরবর্তীতে পঞ্চায়েতের সামনে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় হাজির হয়েছে।বিকাশ দাস বলেন, বিষয়টি আইনে গেলে অনেক কিছুই হবে। ধর্ষণচেষ্টার বিষয়টি ধামাচাপা দিয়ে এভাবে সমাধান দেওয়া ঠিক হয়নি বলে জানান তিনি। পরবর্তীতে অভিযুক্ত যুবকে ভবিষ্যতে এসব না করার শর্ত দিয়ে পঞ্চায়েত শেষ করা হয়। তবে আইনের দৃষ্টিতে ধর্ষণ চেষ্টার বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়া ঠিক হয়নি বলেও স্বীকার করেছেন গ্রামের,মাতব্বরেরা,ভুক্তভোগীর মা বলেন,আমি মেয়েকে নিয়ে বাড়ির পাশে কাজ করতেছি। হঠাৎ করে মানিক লাল দাস চলে এসেছেন। তিনি বলেন, আমি লাকড়ির বস্তা নিয়ে বাড়িতে ফিরছি। এরমধ্যেই অভিযুক্ত যুবক খারাপ উদ্দেশ্যে আমার মেয়েকে জড়িয়ে ধরে ধর্ষণচেষ্টা করেন। সামাজিকভাবে ভুক্তভোগীর পরিবার পঞ্চায়েত ও গ্রাম্য মাতাব্বরদের চাপে রয়েছে বলে জানান ভুক্তভোগীর পরিবার।এ বিষয়ে শাল্লা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ভুক্তভোগীর পরিবার এখনও থানায় আসেনি। আপাতত এই বিষয়ে কোনকিছু বলতে পারবো না। তবে ভুক্তভোগীর পরিবার থানায় এসে অভিযোগ দিলে অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অনন্ত লাল দাস বলেন,৫ম শ্রেনীর এক ছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টার ঘটনা শুনেছি। তবে বিষয়টি গ্রামবাসী সমাধান করে দিয়েছেন বলে জানান তিনি।সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার তোফায়েল আহম্মেদ বলেন, বিষয়টি গুরত্বের সঙ্গে দেখতে পুলিশকে বলে দেওয়া হয়েছে। পরিবারের কেউ থানায় গেলেই মামলা নেওয়া হবে।শুক্রবার রাত নয়টায় পুলিশ সুপার গণমাধ্যমকে বলেন সিএনজিসহ ঘটনায় জড়িত চালক ইমন খান (২৫), বাড়ি দিরাই উপজেলার জকিনগর এবং মিঠু মিয়া নামে আরেক যুবককে আটক করা হয়েছে।