তারিকুল ইসলাম আলভী
২০২৪ সালের ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে সরকার পতনের পর রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক পরিবর্তন আসে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করে ভারতে আশ্রয় নেন। সেই সময় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা, মন্ত্রী এবং সংসদ সদস্যদের অনেকেই গ্রেপ্তার এড়াতে দেশ ছাড়েন। তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন খুলনার প্রভাবশালী রাজনীতিক ও সাবেক সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দিন এবং তার ছেলে শেখ সারহান নাসের তন্ময়।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, তারা বর্তমানে কলকাতায় অবস্থান করছেন এবং সেখানকার আওয়ামী সমর্থকদের সহায়তায় নিরাপদে রয়েছেন। তাদের দৈনন্দিন খরচ সমর্থকরা বহন করছে। দীর্ঘ রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে শেখ হেলালের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, অর্থ আত্মসাৎ, এবং দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল সম্পদ গঠনের অভিযোগ রয়েছে।
শেখ হেলালের ছেলে শেখ তন্ময় সম্পর্কে বিতর্কিত নানা তথ্য উঠে এসেছে। তিনি মাদকাসক্ত ছিলেন এবং তার জীবনের বেশিরভাগ সময় ভারতের বিভিন্ন পুনর্বাসন কেন্দ্রে কাটিয়েছেন। শেখ হেলাল নিয়মিতভাবে গুলশান, বনানী ও বারিধারার মাদক চক্রের বিরুদ্ধে অভিযান চালালেও, পুলিশ প্রতিবারই তন্ময়কে গ্রেপ্তার না করে নিরাপদে বাড়িতে পৌঁছে দিত।
তন্ময়ের ব্যক্তিগত জীবনে নানা অশান্তির খবরও পাওয়া যায়। তিনি এক বাংলাদেশি-জার্মান নারীকে বিয়ে করেছিলেন, কিন্তু স্ত্রীকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করায় তিনি জার্মানিতে পালিয়ে যান এবং আর ফিরে আসেননি। জানা যায়, তন্ময় সংসার জীবনের অধিকাংশ সময় ঘরে কাটাতেন, দিনে ঘুমিয়ে এবং রাতে ক্যাসিনোতে সময় ব্যয় করতেন।
শেখ হেলালের অর্থ কেলেঙ্কারির মূল হোতা ছিলেন তার ব্যক্তিগত সহকারী (এপিএস) মো. হাজনুর। তিনি শেখ হেলালের বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও আর্থিক লেনদেন পরিচালনা করতেন। আওয়ামী লীগের শাসনামলে রাতারাতি বিপুল সম্পদের মালিক হন হাজনুর। তিনি ঢাকার বারিধারায় বিলাসবহুল ফ্ল্যাট কিনেছেন এবং খুলনার বাড়িও নতুনভাবে নির্মাণ করেছেন।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, শেখ হেলালের বিপুল পরিমাণ দুর্নীতির অর্থ যুক্তরাষ্ট্রে তার স্ত্রী শেখ রুপার ভাইয়ের নামে সংরক্ষিত রয়েছে। তিনি শেখ হেলালের সমস্ত অর্থ নিরাপদে বিদেশে রাখার দায়িত্বে আছেন।
২০২৪ সালের ১৯ আগস্ট, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (BFIU) শেখ হেলাল, তার স্ত্রী রুপা চৌধুরী, ছেলে শেখ সারহান নাসের তন্ময় এবং তাদের পরিবারের সব ব্যাংক হিসাবের লেনদেন স্থগিত করে।
শেখ হেলাল ছয়বার বাগেরহাট-১ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন, আর তার ছেলে শেখ তন্ময় একবার বাগেরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু ক্ষমতা হারানোর পর তাদের অনৈতিক কর্মকাণ্ড প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, শেখ হেলালের অবৈধ সম্পদের পাহাড় শেষ পর্যন্ত কার নিয়ন্ত্রণে থাকবে?